
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে র্যাবের ক্ষমতা দেখিয়ে বাজারের গলির রাস্তা দখল করে বানিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফাইয়াছ হাসমিনুর রোবেল।বর্তমানে তিনি কক্সবাজার র্যাব-৭ এর গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা যায়। উপজেলা সদর হাজিরহাট বাজারের উত্তর পাশে তোয়াহা মার্কেট এলাকায় জনচলাচলের গলির রাস্তা কেটে ৫তলা ভবন নির্মাণ করছেন র্যাবের এ সদস্য। বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)অফিসের নজরে আসলে ওই অফিসের সার্ভেয়ার এসে কাজ বন্ধ করার জন্য বললে তিনি নিজের ক্ষমতাবলে ভবনের কাজ চালিয়ে যান।১৪ বছর আগে কনস্টেবল পদে যোগ দিয়ে বর্তমান কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন রোবেল। তার নামে বেনামে অনেক সম্পত্তি রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট চট্টগ্রামের চান্দগাঁ তার কর্ম এলাকায় রোবেল সরকারের পক্ষ হয়ে ছাত্র -জনতার ওপর গুলি চালাতে থানার অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছেন আওয়ামী লীগের লোকজনকে। ঘটনার সত্যতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যাুনালে তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১১সালে ফাইয়াছ হাসমিনুর রোবেলের লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পায়। তার বাবা নুরনবী চৌধুরীর তখনকার সময়ে কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। এর পর আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধার ছেলে হওয়ায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিভিন্ন থানায় দাপটের সহিত চাকরি করে সে। ২০১৯ সালে সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) পদে তার পদন্নোনতি হয়। এএসআই হওয়ার পর তার কর্ম এলাকায় চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানায় জামায়াত-বিএনপির লোকজনের নির্যাতন এবং মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় সে।
অনুসন্ধান জানা যায়, রোবেল ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নে প্রায় অর্ধকোটি টাকার জমি কিনেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলে সরকারের পক্ষ হয়ে চাঁন্দগাঁ থানা এলাকায় সে অনেক দমন-পীড়ন চালায় এ কর্মকর্তা। ওই সময় আন্দোলনের মাত্রা বেড়ে গেলে সাধারণ জনগনের ওপর গুলি চালাতে ৪ এবং ৫আগস্ট আওয়ামী, যুবলীগ ও ছাত্র লীগের নেতা কর্মীদের হাতে থানার অস্ত্র তুলে দেয় সে। ওই দিন সরকারের পতন হয়ে গেলে রোবেল বোরখা পরে এলাকায় পালিয়ে আসে। এলাকায় এসে উপজেলা সদর হাজিরহাট বাজারে আগের ক্রয়কৃত জমিতে ৫তলা ভবনের কাজ শুরু করেন। তার সকল অপকর্ম অল্পদিনে অনেক টাকার মালিক বনে যাওয়ার খবর হাজিরহাট বাজারে সাধারণ জনগনের মুখে মুখে। তাই জনরোষ থেকে বাঁচতে কমলনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আবু ছায়েদ দোলনকে তার হাতের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দাম্ভিকতার সহিত তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে র্যাব সদস্য ফাইয়াছ হাসমিনুর রোবেল ট্রাইব্যুনালে তাকে ডাকার বিষয় স্বীকার করে বলেন ৫ আগষ্ট চাঁন্দগাঁ থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে কয়েকজন ছাত্র মারা যায়। সে অপরাধে ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। সেখানে কোন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়নি। তাকে স্বাক্ষী হিসাবে ডাকা হয়েছে । ২০১৩ সালে পুলিশের কনস্টেবল হিসাবে যোগদানের পর ২০২৩ সালে প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পত্তি কেনা এবং বহুতল ভবন নির্মাণ করার কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আরাফাত হোছাইন বলেন, জনচলাচলের গলি দখল করে ভবন নির্মাণের খবর পেয়ে সার্ভেয়ার গিয়ে কাজ বন্ধ করেছেন।এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।